প্রাচীন ভারতবর্ষীয় সংস্কৃতি ও সাহিত্যে যৌন বৈচিত্র সম্প্রদায়ের কাহিনী: ২য় পর্ব

লেখক: ইয়াছিন আলী

 

ধারাবাহিক: ২য় পর্ব

ইরাবানের সঙ্গে  হিজরা লিঙ্গের (রুপান্তরকামী ও উভলিঙ্গ) মানুষের সম্পর্ক

মহাভারতের ছোট ছোট চরিত্রগুলোর একটি একটি হচ্ছে  ইরাবান । তবে তার আত্মত্যাগ অন্য সকল প্রধান চরিত্রে থাকা পান্ডবদের মতই । ইরাবান হচ্ছে তৃতীয় পান্ডব অর্জুন ও নাগ কন্যা উলুপীর পূত্র । মহাভারতের পুরো কাব্যের মধ্যে একমাত্র উলুপী সেই নারী যে অর্জুনকে মাত্র এক রাতের জন্য পেয়েও সারা জীবন ভালবেসেছিলেন । বিবাহের পরেই পক্ষিরাজ গড়ুর কর্তৃক স্বামীর হত্যা এবং তারপরে অর্জুনকে বিবাহ ও ইরাবানকে জন্ম দেয়ার কারণে দেবর কর্তৃক শ্বশুর বাড়ি ত্যাগ করতে বাধ্য হয় উলুপী । বাবার বাড়িতে থেকেও এক রাতের সঙ্গি অর্জুনের পুত্র ইরাবানকে যোগ্য করে গড়ে তোলেন ।  কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে একমাত্র পুত্র ইরাবানকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন পিতা অর্জুনকে সাহায্যের জন্য । অথচ অপর স্ত্রী চিত্রাঙ্গদা তার পুত্র বভ্রুবাহনকে এই যুদ্ধে পাঠায় নি । সেই হিসেবে উলুপী ও পুত্র ইরাবানের মাহাত্ব সুভদ্রা কিংবা দৌপদীর চেয়ে কম নয় । কুরুক্ষেত্রের অষ্টম দিনের যুদ্ধক্ষেত্রে ইরাবানের বীরত্ব রচিত হয়েছে । ইরাবান প্রতিদিন যুদ্ধে যাওয়ার আগে মহাকালীর পুজো করতো আর দেবী খুশি হয়ে তাকে যুদ্ধের অগ্রীম সব কিছু কানিয়ে দিত । যুদ্ধের সপ্তম দিনে সে জানতে পারে অষ্টম দিনে যুদ্ধে গেলে সে নিহত হবে । আরেকটি ঘটনা প্রচলিত আছে যে যুদ্ধে কোন দল জয়ী হবে এটা নিয়ে শ্রী কৃষ্ণ  চিন্তিত হলে দৈব আদেশে জানতে পান যে একজন উপযুক্ত গুণ সম্পন্ন যোদ্ধাকে দেবী মহাকালীর কাছে বলি হিসেবে প্রদান করতে হবে । যে দল উপযুক্ত বলি দেবে তারাই জয় লাভ করবে। কিন্তু সেই বলিকে স্বেচ্ছায় প্রাণ আহুতি দিতে হবে । এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেন ইরাবান । প্রচলিত দুটি ঘটনার যেটাই হোক না কেন ইরাবান মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছা হিসেবে বিবাহ করার ইচ্ছা জানিয়ে দিলেন । কিন্তু ইরাবানের মৃত্যুর কথা শুনে কেউ তাকে বিবাহ করতে রাজি হল না । অবশেষে শ্রী কৃষ্ণ নারী রুপে রুপান্তর হয়ে ইরাবানকে বিবাহ করেন । এক রাত্রী যাপনের পর ইরাবান অষ্টম দিনের যুদ্ধে নিহত হলেন । শ্রী কৃষ্ণও নিয়ম মেনে স্বামী ইরাবানের জন্য বৈধব্য পালন করলেন ।

 

বি:দ্র: ছবিগুলো ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত

ভারতের তামিলনাড়ু প্রদেশের ভিলুপ্পূরম জেলার কুভাগাম গ্রামের একটি মন্দিরে প্রতি বছর রুপান্তরকামী মানুষরা ইরাবানের আত্মত্যাগ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে । প্রথমে মন্দিরের পুরোহিত রুপান্তকামীদের বিবাহ দেন দেবতা ইরাবানের সঙ্গে । তারপর ইরাবানের বলি উপলক্ষে সকলে পালন করেন বৈধব্য । রুপান্তকামীরা এর মাধ্যমে শ্রী কৃষ্ণের রুপান্তরীত রুপ মোহিনীর ভূমিকায় নিজেদের তুলে ধরেন ।

প্রাচীন ভারতবর্ষীয় সংস্কৃতি ও সাহিত্যে যৌন বৈচিত্র সম্প্রদায়ের কাহিনী: ১ম পর্ব