১১ই মার্চ, বৃহস্পতিবার সমগ্র ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) সমকামী ও অন্যান্য যৌন সংখ্যালঘুদের (এলজিবিটিকিউ) জন্য স্বাধীন অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে । ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৪৯২ জন সদস্য এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন, ১৪১ জন প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেন এবং ৪৬ জন ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিলেন। ফলে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠাতায় প্রস্তাবটি পাশ হয় । ইইউ’র এই প্রস্তাবনায় বলা হয়, ‘এলজিবিটিকিউ ব্যক্তিরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে কোনো জায়গায় কোনো অসহিষ্ণুতার ভয়, বৈষম্য ও নিপীড়ন ছাড়াই বসবাসের স্বাধীনতা উপভোগ করবে এবং প্রকাশ্যে তাদের যৌন দৃষ্টিভঙ্গি ও লৈঙ্গিক পরিচয় প্রকাশ করতে পারবে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের সকল স্তরের প্রশাসন এলজিবিটিকিউসহ সবার সমতা ও মৌলিক অধিকার রক্ষা ও উন্নীত করবে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র পোল্যান্ড এবং হাঙ্গেরিতে এলজিবিটি সম্প্রদায় চরম নির্যাতনের শিকার । দীর্ঘদিন থেকে ইউরোপের এই দেশ দুটিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে সমকামীরা বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে । তবে ইইউ’র এই প্রস্তাবে পোল্যান্ড এবং হাঙ্গেরির নাম উল্লেখ করে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। ইইউ-র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ইউনিয়নের ২৭টি দেশে সমকামী সহ গোটা এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠীর মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে। তাদের উপর কোনো রকম আক্রমণ করা যাবে না। বৈষম্যমূলক আচরণও করা যাবে না। আর সকলের মতো এই গোষ্ঠীর মানুষেরাও স্বাভাবিক এবং স্বচ্ছন্দ্য জীবনযাপন করতে পারবেন।
প্রস্তাবটি বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে বিতর্কে যাওয়ার আগেই এর প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন।
বুধবার টুইটে তিনি লেখেন, ‘নিজের মতো হওয়া কোনো আদর্শ নয়। এটি আপনার পরিচয়। কেউ এটা কেড়ে নিতে পারবে না। ইইউ আপনার বাড়ি। ইউ এলজিবিটিকিউদের জন্য স্বাধীন অঞ্চল।’
গত বছর ভন ডের লেয়েন বলেছিলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নে পোল্যান্ডের ‘এলজিবিটি মুক্ত অঞ্চলের’ কোনো জায়গা নেই।’ তিনি সকল ইইউ সদস্য রাষ্ট্রকে সমলিঙ্গের দম্পতিদের সন্তান দত্তক নেয়াকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন।
পার্লামেন্টের জার্মান সদস্য ও প্রস্তাবের পক্ষে কাজ করা অন্যতম কর্মী টেরি রেইন্ট টুইটারে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘চলুন এটা ব্যবহার করি। চলুন এটিকে দৃঢ় রাজনৈতিক পদক্ষেপে পরিণত করি: আরও ভালো আইন, আরও ভালো প্রয়োগ, আরও ভালো সুরক্ষা। আমরা সবাই মিলে এটি করতে পারব।’
পোল্যান্ড প্রশাসন এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে । প্রশাসনের বক্তব্য, তাদের দেশ রক্ষণশীল। সেখানে সমাজ কীভাবে চলবে, তা দেখার এবং বোঝার দায়িত্ব সার্বভৌম সরকারের। নীতি প্রণয়নও সে ভাবেই হয়। স্বাধীন সরকারের নীতিতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারো নেই।
পোল্যান্ডের এই বক্তব্যের কারণে পাশ হওয়া এই প্রস্তাব কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে সঙ্কা দেখা দিয়েছে । এটি শুধু কাগুজে প্রস্তাব হয়ে থাকবে নাকি বাস্তবায়নও হবে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারকর্মীগণ ।
সূত্র: এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, ডিপিএ) এবং DW News